-->
বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

চাঁদে পানি! বিজ্ঞান কি বলে

© Mehrab360


ন্ধুরা আজকের এই পোস্টে শোনাবো, চাঁদে পানি! বিজ্ঞান কি বলে? আসল তথ্য এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবে।

তোমার কি মনে হয়- চাঁদে পানি আছে নাকি নেই? আমরা এখন নিশ্চিতভাবে জানলেও ইতিহাসের পাতাজুড়ে এমন চিত্র ছিল না, বিজ্ঞানীরা ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে মানুষের কৌতূহলের বস্তু ছিল এই চাঁদ।

সংগৃহীত



মহাকাশ অভিযানে সাধারণত পৃথিবী থেকেই প্রয়োজনীয় উপাদান বহন করে নিতে হয়। সম্প্রতি নাসার মার্স রোভার মঙ্গলেই অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এবার চীনের গবেষকরা বলছেন, পৃথিবী থেকে বহনের দরকার নেই। চাঁদের মাটি থেকেই আসবে অক্সিজেন, পানি ও জ্বালানি।

 

১৬৪৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাইকেল ভ্যান ল্যাংরেন চাঁদের মানচিত্র তৈরি করেন। এটাই প্রথম চাঁদের মানচিত্র। এই মানচিত্রে চাঁদের কালো দাগগুলোকে ল্যাংরেন 'মারিয়া' (maria) বলে উল্লেখ করেন। লাতিন ভাষায় মারিয়া অর্থ সমুদ্র। কারণ, তখনকার জনগণ চাঁদের কালো দাগগুলোকে সমুদ্র মনে করত।



এ ধারণা পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় ১৮৯২ সালে। আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী বেশকিছু পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ঘোষণা দেন যে চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। বায়ুমণ্ডল না থাকলে চাঁদের ভূ-ত্বকে পানি থাকাও সম্ভব না। তাই সবাই মনে করতে লাগল চাঁদে কোনো পানি নেই।


ঘটনা আবার ১৮০ ডিগ্রি মোড় নেয় ১৯৬০ এর দশকে। ১৯৬১ সালে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী কেনেথ ওয়াটসন একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দেখান যে চাঁদের মাটিতে পানি থাকা সম্ভব।


এর কয়েকবছর পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অ্যাপোলো মিশনে করে চাঁদের মাটিতে প্রথমবারের মত পা রাখে মানুষ। অ্যাপোলো মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফেরত আসার সময় কিছুটা চাঁদের মাটি নিয়ে এসেছিলেন। সেই মাটি নিয়ে গবেষণা করে পানির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।


১৯৯৪ সালে আবারও হাওয়া বদল ঘটে। নাসার ক্লিমেন্টাইন (Clementine) মিশন থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে জানা যায়, চাঁদের যেসব এলাকায় কখনোই সূর্যের আলো পড়ে না সেসব জায়গায় বরফ আছে। তবে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ২০০৮ সালে সিদ্ধান্ত নেন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাপোলো মিশন থেকে আনা চাঁদের মাটি নিয়ে আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তারা আগ্নেয়গিরির কাঁচের ক্ষুদ্রাংশের ভিতরে হাইড্রোজেন খুঁজে পান। চাঁদে এখন আর কোনো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয় না। তাহলে অতীতে চাঁদে যখন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হত তখন নিশ্চয় চাঁদে পানি ছিল।

২০০৯ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পাঠানো চন্দ্রযান-১ মহাকাশযান চাঁদের যেসব অংশে সূর্যের আলো পড়ে সেসব জায়গায় অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন অণু খুঁজে পায়। তবে পানির উপস্থিতির নিশ্চয়তা মিলছিল না কিছুতেই।

অবশেষে ২০১৮ সালে নিশ্চিত হওয়া যায় চাঁদে পানির উপস্থিতি নিয়ে। চন্দ্রযান-১ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদের খনিজ পদার্থ নিয়ে ম্যাপ তৈরি করেন। এই ম্যাপ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় চাঁদে পানি-বরফের উপস্থিতি।


তবে এই নিশ্চয়তা চাঁদের যেসব অংশে সূর্যের আলো পড়ে না সেসব জায়গার জন্য। কিন্তু চাঁদের যেসব জায়গায় সূর্যের আলো পড়ে সেখানে পানি আছে কিনা তা জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয় আরও ২ বছর।



২০২০ সালে নাসার সোফিয়া (SOFIA) মিশন থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে জানা যায় চাঁদের এক ঘনমিটার মাটিতে গড়ে প্রায় ৩৪০ মিলিলিটার পানি রয়েছে।

সম্প্রতি ২০২৩ সালে নাসা চাঁদে পানির বিস্তার নিয়ে নতুন ম্যাপ প্রকাশ করেছে।

চাঁদে যে পানি আছে তা আমরা এখন নিশ্চিতভাবেই জানি। কিন্তু এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি। যেমন: চাঁদে পানির উৎপত্তি হল কীভাবে? আশা করি, তোমরাই খুঁজে বের করে আমাদেরকে জানাবে চাঁদের আরও অনেক অজানা রহস্য।

{fullWidth}
© Mehrab360