বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

ল্যাপটপের বিকিরণে যে ক্ষতি হয়

© Mehrab360


এককালে একটা কম্পিউটারের জন্য জায়গা লাগত একটা প্রমাণ সাইজের ঘর। সেই বিশাল কম্পিউটার এখন জায়গা করে নিয়েছে আপনার-আমার ল্যাপের ওপর। মানে কোলের ওপর। সে কারণেই এর নাম ল্যাপটপ। আদরের পোষা প্রাণীর মতোই এখন তা ব্যবহারকারীদের প্রিয় বস্তু। তবু অনেকের ভয় কাটে না। কেউ কেউ সন্দেহ করেন, ল্যাপটপ থেকে কোনো ক্ষতিকর বিকিরণ নিঃসৃত হয়। সেগুলো হয়তো দেহের জন্য ক্ষতিকরও। বিষয়টি সত্যি কি না, চলুন খতিয়ে দেখা যাক।

সংগৃহীত

ল্যাপটপ থেকে বিকিরণ নিঃসৃত হয়, তাতে কোনো ভুল নেই। তাও এক বা দুই ধরনের নয়, বেশ কয়েক ধরনের। প্রথমত ল্যাপটপের পর্দা থেকে যে দৃশ্যমান আলো বের হয়, সেটাও এক ধরনের বিকিরণ। একে বলে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম বা বিচ্যুৎ-চুম্বকীয় বর্ণালি রেখায় এর কম্পাংকের পরিসর প্রায় ৪০০ থেকে ৮০০ টেরাহার্জ এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার [১ ন্যানোমিটার= ০.০০০০০০০০১ মিটার বা ১০-৯ মিটার। আরও সহজ করে বললে, ১ মিটারের এক বিলিয়ন বা একশ কোটি ভাগের এক ভাগ]। এই বিকিরণের কারণেই ল্যাপটপের ডিসপ্লে আমরা চোখে দেখতে পাই।

আবার ল্যাপটপ কিছুক্ষণ চালু রাখলে ব্যাটারিসহ নানা কারণে তার বিভিন্ন অংশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ কারণেও একধরনের বিকিরণ নিঃসৃত হয়। একে বলা হয় ইনফ্রারেড রেডিয়েশন। বাংলায় অবলোহিত বা অবলাল বিকিরণ। এর কম্পাংক ১০ থেকে ১০০ টেরাহার্জ। আর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ থেকে ৩ মাইক্রোমিটার। একে থার্মাল বা তাপীয় নিঃসরণ বলা হয়। এই বিকিরণ আমরা চোখে দেখতে পাই না।

ল্যাপটপ থেকে বের হওয়া বিকিরণগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাহলে মানুষের জন্য ক্ষতিকর বিকিরণ কোনগুলো? সেটার সহজ উত্তর হলো, উচ্চশক্তির বিকিরণ। বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে চাইলে বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বর্ণালি রেখাটায় ভালোভাবে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। ছবির বাম পাশ থেকে দেখলে প্রথমেই পড়বে রেডিও ওয়েভ বা বেতার তরঙ্গ। এরপর ক্রমান্বয়ে ইনফ্রারেড বা অবলোহিত, দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনি, এক্স-রে এবং সবশেষে গামারশ্মি।

যেকোনো বিকিরণ হয় উচ্চশক্তির হয়, না হলে নিম্নশক্তির হয়। উচ্চশক্তির হওয়ার কারণ ওই বিকিরণের প্রতিটি কণার শক্তি অনেক বেশি। আর নিম্নশক্তির হওয়ার কারণ প্রতিটি কণার শক্তি কম বা দুর্বল। বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বর্ণালি রেখায় উচ্চশক্তির বিকিরণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিবেগুনি রশ্মি, এক্স-রে ও গামারশ্মি। অর্থাৎ দৃশ্যমান আলোর ডানদিকের অংশের বিকিরণগুলো উচ্চশক্তির। এ ছাড়াও রয়েছে নিউক্লিয়ার বিকিরণ (যেমন আলফা, বিটা রশ্মি, নিউট্রন ও প্রোটন বিকিরণ)। এসব বিকিরণের প্রতিটি কণার শক্তি এত বেশি হয় যে তা বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে ফেলতে পারে। তাতে মিউটেশন, ক্যান্সার ও বিকিরণজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। আবার উচ্চশক্তির কণারা যেকোনো অণুও ভেঙে ফেলতে বা ধ্বংস করে ফেলতে পারে। কিন্তু তবু মানবদেহে ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বিকিরণের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু সাধারণত সে ধরনের ঘটনা ঘটে না। সে কারণে পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ধরনের উচ্চশক্তির কণার (ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন) উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমরা সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি না।

বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বর্ণালি রেখার বাঁদিক থেকে দৃশ্যমান আলো পর্যন্ত বিকিরণগুলো কম শক্তির। কিন্তু সাবধান, কম শক্তির বিকিরণও অনেক সময় ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। যদি অল্প জায়গায় গুচ্ছ বা বিম আকারে কম শক্তির কণারা জড়ো হয়, তাহলে সেটাও উচ্চশক্তির বিকিরণে পরিণত হতে পারে। যেমন উজ্জ্বল লাইট বাল্ব ও উচ্চশক্তির লেজার। এ ধরনের বিকিরণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
{fullWidth}
© Mehrab360