মহাবিশ্বের শেষ প্রান্ত কোথায়?
রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পেতে রীতিমতো গবেষণা করতে হবে। আকাশের সৌন্দর্য দেখতে কবি কিংবা বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু মাথা তুলে ওপরের দিকে তাকালেই এ সৌন্দর্য দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কিন্তু মানবজাতি মহাশূন্যের যে রূপ দেখে পুলকিত হয়েছে, তার শেষ কোথায়? কত বড় এই মহাবিশ্ব? খালি চোখে দেখা তারাগুলোই-বা কত দূরে?
![]() |
সংগৃহীত |
এসব রহস্য উন্মোচনের আগে একটু পৃথিবী থেকে ঘুরে যাওয়া যাক। ধরুন, আপনি কক্সবাজার যাবেন। গুগল ম্যাপ অনুসারে প্রায় ৪০০ কিলোমিটারের পথ। এবার আপনি দেশের বাইরে যাবেন। ধরি, নেপাল যাচ্ছেন। দূরত্ব প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। আরও দূরে, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। দূরত্ব প্রায় ১৩ হাজার কিলোমিটার। বুঝতেই পারছেন, ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ছে। গুগলের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী দেশ পেরু, দূরত্ব প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার। এবারে রাস্তার হিসেব বাদ দিয়ে একটু ওপরে ওঠা যাক। আবার ওই পাটিগণিতের ‘ধরি’ শব্দটা ব্যবহার করি। ধরুন, পৃথিবীর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেন্দ্র বরাবর একটা গর্ত করবেন, যাতে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের যাওয়া যায়। যদিও পৃথিবী বা বৃত্তের কোনো ওপর-নিচ হয় না। কিন্তু ওই যে গণিতের ধরি শব্দটা যে আমাদের সঙ্গে আছে। এভাবে গর্ত করলে দূরত্ব হবে প্রায় ১২ হাজার ৭৫৬ কিলোমিটার। কিন্তু আপনি যদি ‘ধরি’ শব্দটা পছন্দ না করেন, তাহলে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু বরাবর মাপতে পারেন। না, কষ্ট করে আর মাপতে হবে না। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা তা মেপেছেন। প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার। এই হচ্ছে পৃথিবীর ভেতর-বাইরের হিসাব। এখন পৃথিবীর বাইরে যাওয়া যাক ধীরে ধীরে। দেখি, মহাবিশ্বটা আসলে কত বড়!
মহাবিশ্বে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের আত্মীয় চাঁদ। তাই পৃথিবীর পরেই আমরা চাঁদে যেতে চাই। আগেও পৃথিবী থেকে ১২ নভোচারী চাঁদে গিয়েছেন। তাই আমাদের যেতে কোনো সমস্যা নেই। পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। পরপর ৩০টা পৃথিবী পাশাপাশি বসিয়ে রাখলে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের সমান হবে। আপনি যদি পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত একটা রাস্তা বানান এবং সেই রাস্তা ধরে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে একটা গাড়িয়ে চালিয়ে চাঁদে যেতে চান, তাহলে সময় লাগবে টানা ১৬০ দিন। এটাই আমাদের সবচেয়ে কাছের বস্তু। তবে প্রথম যে দুই নভোচারী চাঁদে পা রেখেছিলে—নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন, তাঁদের কিন্তু এত সময় লাগেনি। রকেটে করে মাত্র ৩ দিনে পৌঁছে গেছেন চাঁদের পৃষ্ঠে। সেটাও সেই ১৯৬৯ সালে। চাঁদের পরে আমরা এখন যেতে চাই সূর্যে। আবার পাটিগণিতের সেই ‘ধরি’ শব্দটা ব্যবহার করতে হচ্ছে। ধরুন, সূর্যপৃষ্ঠে গেলে আমাদের কিছুই হবে না। ম্যান অব স্টিল! সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। চাঁদ থেকে সূর্য যতটা দূরে, তার থেকেও প্রায় ৪০০ গুণ বেশি দূরত্ব। এই দূরত্বকে বলে ১ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট। বাংলায় আমরা একে বলতে পারি সৌরজাগতিক একক। ধীরে ধীরে আমরা এত দূরে চলে যাব যে কিলোমিটার দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। তাই বড় দূরত্ব পরিমাপের জন্য আমরা ভবিষ্যতে এই অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা সৌরজাগতিক একক ব্যবহার করব।