চ্যাট জিপিটি আসলে যেভাবে কাজ করে
© Mehrab360
© Mehrab360
চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) হলো OpenAIদ্বারা তৈরি একটি শক্তিশালী ভাষা মডেল, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এটি মানুষের ভাষা বুঝতে এবং উত্তর প্রদান করতে সক্ষম একটি Generative Pre-trained Transformer (GPT) মডেল। এর কাজের প্রক্রিয়া বেশ জটিল হলেও মূলত এটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে বিভক্ত। নিচে এর কাজের বিশদ বর্ণনা দেওয়া হলো।
প্রথমত, চ্যাটজিপিটির মৌলিক ভিত্তি হলো প্রশিক্ষণ ডেটা। মডেলটি বিভিন্ন ধরনের বৃহৎ টেক্সট ডেটাসেট দিয়ে প্রশিক্ষিত। এই ডেটাসেটগুলো সংগ্রহ করা হয় ইন্টারনেটে পাওয়া উন্মুক্ত উৎস থেকে, যেমন বই, নিবন্ধ, ওয়েবসাইট এবং অনলাইন আলোচনার উপাদান। প্রশিক্ষণের সময় এটি ভাষার গঠন, শব্দার্থ, এবং বাক্যের বিন্যাস সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে। মডেলটি এমনভাবে প্রশিক্ষিত যে এটি মানুষের মতো প্রাসঙ্গিক এবং বোধগম্য উত্তর তৈরি করতে পারে। তবে এর প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া খুবই নিয়ন্ত্রিত, যাতে এটি অশালীন বা ক্ষতিকর বিষয়বস্তু প্রদান না করে।
দ্বিতীয়ত, চ্যাটজিপিটি কাজ করে Transformer Architecture ব্যবহার করে, যা বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ট্রান্সফরমার হলো একটি গভীর নিউরাল নেটওয়ার্কের কাঠামো, যা বড় ডেটাসেট থেকে ভাষার প্যাটার্ন এবং প্রসঙ্গ বুঝতে সক্ষম। বিশেষ করে, GPT মডেল ভাষা তৈরির জন্য Self-Attention Mechanism ব্যবহার করে। এটি ইনপুটে থাকা প্রতিটি শব্দ বা বাক্যের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে বের করে এবং সেই অনুযায়ী আউটপুট তৈরি করে।
চ্যাটজিপিটির কার্যপ্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ হলো ইনপুট প্রক্রিয়াকরণ। যখন একজন ব্যবহারকারী কোনো প্রশ্ন করে বা তথ্য জানতে চায়, তখন মডেলটি সেই ইনপুটটিকে প্রথমে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় টোকেনাইজেশন। উদাহরণস্বরূপ, “আপনি কেমন আছেন?” বাক্যটিকে মডেল প্রথমে বিভিন্ন টোকেনে ভাঙবে, যেমন: "আপনি", "কেমন", "আছেন"। এরপর মডেল এই টোকেনগুলো বিশ্লেষণ করে এবং এর ভিত্তিতে প্রসঙ্গ বুঝে।
এরপর মডেল ইনপুটের ওপর ভিত্তি করে বাক্য গঠন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করে। GPT মডেল কাজ করে ভাষার ভবিষ্যদ্বাণী করার মাধ্যমে, অর্থাৎ, এটি নির্ধারণ করে কোন শব্দটি বা বাক্যাংশটি পরবর্তী হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ প্রশ্ন করে “চাঁদ কোথায় অবস্থিত?” মডেল প্রথমে চাঁদ এবং অবস্থানের মধ্যে সম্পর্ক বুঝে এবং তারপর একটি যুক্তিযুক্ত উত্তর প্রদান করে। এটি একাধিক সম্ভাব্য উত্তর তৈরি করতে পারে এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিকটি বেছে নেয়।
মডেলের ফাইন-টিউনিং (Fine-tuning) প্রক্রিয়া এর কার্যকারিতা আরও বাড়ায়। চ্যাটজিপিটির উন্নত সংস্করণগুলো মানুষের মত প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম হওয়ার জন্য বিশেষভাবে টিউন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় মানুষ মডেলের আউটপুট পরীক্ষা করে দেখে এবং সঠিক বা ভুল প্রতিক্রিয়ার জন্য মডেলকে র্যাঙ্কিং দেয়। এর মাধ্যমে মডেল শিখতে পারে কীভাবে আরও ভালো উত্তর তৈরি করা যায়।
অবশেষে, মডেল ব্যবহারকারীকে আউটপুট প্রদান করে। এটি উত্তর প্রদানের সময় এমনভাবে কাজ করে যেন কথোপকথনটি প্রাকৃতিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হয়। মডেল বিভিন্ন ধরণের উত্তর দিতে সক্ষম, যেমন তথ্যভিত্তিক উত্তর, পরামর্শ, সৃজনশীল লেখা, বা এমনকি জটিল সমস্যা সমাধান। এর উত্তর প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমিক এবং পুনরাবৃত্তিমূলক। মডেল প্রতিটি ধাপে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করে, যাতে ভবিষ্যতের প্রতিক্রিয়া আরও ভালো হয়।
তবে, চ্যাটজিপিটির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি সবসময় ১০০% সঠিক উত্তর দিতে পারে না। কারণ, এটি কেবল তার প্রশিক্ষিত ডেটার উপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং ২০২৩ সালের পরের তথ্য সরাসরি শিখতে পারে না। পাশাপাশি এটি কখনও কখনও ভুল তথ্যও দিতে পারে, যেটি "হ্যালুসিনেশন" নামে পরিচিত। মডেলটি ব্যবহারকারীর ইনপুটের প্রতি নির্ভরশীল, তাই অস্পষ্ট বা বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করলে এটি ভুল উত্তর দিতে পারে।
চ্যাটজিপিটি একটি জটিল, তবে কার্যকর প্রযুক্তি যা ভাষাগত বোধগম্যতার মাধ্যমে মানুষের সাথে কথোপকথন পরিচালনা করে। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন শিক্ষা, গ্রাহক সহায়তা, সৃজনশীল লেখা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। যদিও এতে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এর প্রক্রিয়াগত উন্নতি এবং মানুষের মত উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা এটিকে অত্যন্ত কার্যকর এবং জনপ্রিয় একটি টুলে পরিণত করেছে।
{fullWidth}
ক্যাটাগরি
প্রযুক্তি