বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

সূর্যের কাছাকাছি গিয়ে ইতিহাস গড়তে চায় নাসার সোলার প্রোব

© Mehrab360

নাসার পার্কার সোলার প্রোব মহাকাশযানটি সূর্যের দিকে ইতিহাসের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এটি সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল বা করোনায় প্রবেশ করছে, যেখানে প্রচণ্ড তাপমাত্রা এবং তীব্র বিকিরণ সহ্য করতে হবে। এই বিপজ্জনক যাত্রার সময় মহাকাশযানটি পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগে থাকবে না, এবং বিজ্ঞানীরা ২৭ ডিসেম্বর একটি সংকেতের অপেক্ষায় থাকবেন এটি সফলভাবে ফিরে আসার প্রমাণ পাওয়ার জন্য। 


এআই দিয়ে নির্মিত


পার্কার সোলার প্রোব ২০১৮ সালে সূর্যের দিকে যাত্রা শুরু করে এবং ইতোমধ্যেই ২১ বার সূর্যের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছে। এবার, বড়দিনের আগের দিন পার্কার প্রোব সূর্যের বাইরের পরিবেশে বা করোনায় প্রবেশ করছে। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন মাইল দূরত্বে পৌঁছে এটি ইতিহাস গড়ছে। এই দূরত্বকে বোঝাতে নাসার বিজ্ঞানী ড. নিকোলা ফক্স বলেন, "যদি সূর্য ও পৃথিবীকে এক মিটারের ব্যবধানে ধরা হয়, তবে পার্কার প্রোব সূর্যের মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে অবস্থান করছে।" 


এই অভিযান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্রোবটিকে ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং তীব্র বিকিরণ সহ্য করতে হবে। তবে ১১.৫ সেন্টিমিটার পুরু কার্বন-কম্পোজিট ঢাল এটি রক্ষা করছে। দ্রুতগতির জন্য এটি ৪,৩০,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টায় এগিয়ে চলেছে, যা লন্ডন থেকে নিউইয়র্কের দূরত্ব মাত্র ৩০ সেকেন্ডে অতিক্রম করার সমান। 


এই মিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সূর্যের করোনার রহস্যময় উচ্চ তাপমাত্রার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। সূর্যের পৃষ্ঠ ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও করোনা লাখ লাখ ডিগ্রি পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়। এই বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা এখনও অজানা। পাশাপাশি, সৌর বায়ুর প্রকৃতি ও এর প্রভাব বোঝার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। সৌর বায়ু পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে আকাশে চমৎকার অরোরা সৃষ্টি করে, কিন্তু এর কারণে বৈদ্যুতিক গ্রিড ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যাও হতে পারে। 


নাসার বিজ্ঞানীরা ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের সময় পার্কার প্রোব থেকে সংকেতের অপেক্ষায় থাকবেন। সফল সংকেত পাঠানোর পর বিজ্ঞানীরা এই অভিযানকে এক বড় সাফল্য হিসেবে দেখবেন। ড. নিকোলা ফক্স আত্মবিশ্বাসী, "আমরা প্রোবটিকে এমনভাবে ডিজাইন করেছি যাতে এটি সূর্যের অতি কঠোর পরিবেশ সহ্য করতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মহাকাশযান।" 


এই অভিযান কেবলমাত্র সূর্যের গঠন ও কার্যক্রম নিয়ে বিজ্ঞানীদের জ্ঞান বাড়াবে না, বরং মহাকাশ আবহাওয়ার সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সংযোগ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেবে। সূর্যের রহস্যময় পরিবেশে এই ঐতিহাসিক প্রবেশ মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

তথ্যসূত্রঃ bbc.com

{fullWidth}
© Mehrab360