বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

১১৯ ও ১২০তম মৌল আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীদের অগ্রগতি

© Mehrab360
পৃথিবীর বিজ্ঞান জগত বরাবরই মৌলিক উপাদানগুলো আবিষ্কার এবং তাদের বৈশিষ্ট্য অন্বেষণে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায়, পারমাণবিক পর্যায় সারণির ১১৯তম এবং ১২০তম মৌল নিয়ে গবেষণা বর্তমানে একটি অত্যন্ত আলোচিত বিষয়। এই মৌল দুটি ইউনুনিয়াম (Unennium) এবং আনবিনিলিয়াম (Unbinilium) নামে পরিচিত, যার প্রতীক যথাক্রমে Une এবং Ubn। যদিও এগুলো এখনও পুরোপুরি আবিষ্কার হয়নি, বিজ্ঞানীরা তাদের তাত্ত্বিক অস্তিত্ব এবং সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ও বৈশিষ্ট্য


ইউনুনিয়াম (Une) এবং আনবিনিলিয়াম (Ubn) যথাক্রমে ১১৯ এবং ১২০ পারমাণবিক সংখ্যার মৌল। এই মৌলগুলো পারমাণবিক পর্যায় সারণির অষ্টম পিরিয়ডে অবস্থান করবে। ইউনুনিয়াম একটি ক্ষার ধাতু হতে পারে, যার বৈশিষ্ট্য একা-ফ্র্যান্সিয়ামের (eka-francium) সাথে মিল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, আনবিনিলিয়াম একটি ক্ষারীয় পৃথিবী ধাতু হতে পারে, যা একা-রেডিয়ামের (eka-radium) মতো আচরণ করতে পারে। তবে, এই মৌলগুলোর প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।


এআই দিয়ে নির্মিত


আবিষ্কারের পদ্ধতি


এই মৌল দুটি সৃষ্টির জন্য বিজ্ঞানীরা মূলত উচ্চ শক্তির পারমাণবিক সংঘর্ষ ব্যবহার করছেন। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে হালকা ও ভারী নিউক্লিয়াসকে সংঘর্ষের মাধ্যমে একীভূত করে নতুন মৌল তৈরির চেষ্টা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়াম (Cf) এবং ভিন্নধর্মী তেজস্ক্রিয় মৌল ব্যবহার করে নতুন মৌল গঠনের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। ১১৯ এবং ১২০ নম্বর মৌলগুলোর স্থায়িত্ব খুব কম সময়ের জন্য হতে পারে, যা তাদের আবিষ্কারকে আরও কঠিন করে তুলছে।

চ্যালেঞ্জ এবং সীমাবদ্ধতা


১১৯ এবং ১২০তম মৌল আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো তাদের স্থিতিশীলতার অভাব। এই মৌলগুলো অতি ভারী হওয়ার কারণে দ্রুত বিক্রিয়াশীল এবং ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন যে, স্থিতিশীলতার দ্বীপ (Island of Stability) নামক ধারণাটি এই মৌলগুলোর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, যার ফলে এরা কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া, এই মৌলগুলো তৈরির জন্য যে পরিমাণ শক্তি এবং প্রযুক্তি দরকার, তা বর্তমানে সীমাবদ্ধ।

সাম্প্রতিক গবেষণার অগ্রগতি


২০২৩ সালের মাঝামাঝি, বিজ্ঞানীরা ১১৯ ও ১২০তম মৌল তৈরির জন্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত পারমাণবিক রিঅ্যাকটর এবং উচ্চ-শক্তি লেজারের ব্যবহার। জার্মানি, জাপান এবং রাশিয়ার গবেষণাগারে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এবং জাপানের রাইকেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি এই ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে।

আবিষ্কারের প্রভাব


১১৯ এবং ১২০তম মৌল আবিষ্কার শুধুমাত্র মৌলিক রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, বরং প্রযুক্তি এবং চিকিৎসাশাস্ত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। অতি ভারী মৌলগুলো সাধারণত তেজস্ক্রিয় হয়, যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে। পাশাপাশি, এই মৌলগুলোর আবিষ্কার পরমাণু প্রযুক্তি এবং শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা


বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা এবং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ১১৯ এবং ১২০তম মৌল আবিষ্কার সময়ের ব্যাপার। ভবিষ্যতে, এই মৌলগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা পাওয়া যাবে, যা মৌলিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনতে সক্ষম। নতুন মৌলগুলোর আবিষ্কার আমাদের মহাবিশ্বের গঠন এবং পরমাণুর আচার-আচরণ সম্পর্কে আরও বিশদ জ্ঞান প্রদান করবে।


১১৯ এবং ১২০তম মৌল আবিষ্কারের প্রচেষ্টা বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এই মৌলগুলো সারণির পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের সম্ভাব্য প্রয়োগের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য অভূতপূর্ব সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। বিজ্ঞানীদের এই প্রচেষ্টা মৌলিক বিজ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গবেষণার নতুন ক্ষেত্র উন্মুক্ত করবে।

{fullWidth}
© Mehrab360