মহাবিশ্বের ভর কত? বিশাল ধারণা
© Mehrab360
{fullWidth}
© Mehrab360
মহাবিশ্বের ভর একটি জটিল ও রহস্যময় বিষয়, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ, এবং মহাবিশ্বতত্ত্ববিদদের গবেষণার কেন্দ্রে রয়েছে। মহাবিশ্ব যে কেবল বিশাল, তা নয়, বরং এর ভর ও শক্তির সম্পূর্ণ চিত্র আমাদের আজও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবুও, বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু তথ্য ও তত্ত্বের ভিত্তিতে মহাবিশ্বের ভর সম্পর্কে ধারনা পেতে সক্ষম হয়েছেন।
মহাবিশ্বের ভর মূলত দুই ভাগে বিভক্ত: দৃশ্যমান (visible) ভর এবং অদৃশ্য (invisible) ভর। দৃশ্যমান ভর বলতে আমরা যা দেখতে পাই, যেমন নক্ষত্র, গ্রহ, গ্যালাক্সি, ধূলিকণা এবং গ্যাস, সেগুলিকে বোঝায়। কিন্তু মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভরই আসলে অদৃশ্য। বিজ্ঞানীরা এই অদৃশ্য ভরকে "ডার্ক ম্যাটার" (অন্ধকার পদার্থ) এবং "ডার্ক এনার্জি" (অন্ধকার শক্তি) নামে অভিহিত করেছেন।
দৃশ্যমান ভরের অবদান
দৃশ্যমান ভর বা পরমাণবিক পদার্থ মহাবিশ্বের মোট ভরের মাত্র ৪.৯% অংশ গঠন করে। এটি এমন পদার্থ যা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে থাকা বিশাল নক্ষত্রসমূহ এবং তাদের চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহ এই দৃশ্যমান ভরের অংশ। কিন্তু মহাবিশ্বে দৃশ্যমান বস্তু অপেক্ষা অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে এমন কিছু যা আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।
![]() |
এই ছবিটি মহাবিশ্বের ভর-বণ্টনের একটি চিত্র তুলে ধরে, যেখানে দৃশ্যমান পদার্থ, ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির আনুপাতিক সম্পর্ক প্রদর্শিত হয়েছে। আশা করি এটি আপনার চাহিদা পূরণ করবে। |
ডার্ক ম্যাটার এবং এর প্রভাব
মহাবিশ্বের মোট ভরের ২৬.৮% গঠন করে ডার্ক ম্যাটার। এই ডার্ক ম্যাটার নিজেই আলো বিকিরণ করে না বা শোষণ করে না, তাই সরাসরি এটি দেখা সম্ভব নয়। তবে এর প্রভাব আমরা গ্যালাক্সি ও অন্যান্য মহাজাগতিক কাঠামোর গতিবিধিতে অনুভব করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, গ্যালাক্সিগুলির ঘূর্ণন গতি এবং বৃহৎ-মাত্রার মহাজাগতিক গঠন (large-scale cosmic structure) ব্যাখ্যা করতে গেলে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব মেনে নিতে হয়।
ডার্ক এনার্জির ভূমিকা
মহাবিশ্বের ভরের একটি বিশাল অংশ, প্রায় ৬৮.৩%, গঠিত ডার্ক এনার্জি দ্বারা। ডার্ক এনার্জি হলো একধরনের রহস্যময় শক্তি, যা মহাবিশ্বের প্রসারণকে ত্বরান্বিত করছে। মহাবিশ্বতত্ত্বের স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে এবং ডার্ক এনার্জি এই প্রসারণে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
মহাবিশ্বের মোট ভর-শক্তি
বিজ্ঞানীরা এককভাবে ভর (mass) এবং শক্তিকে আলাদা করে দেখতে পারেন না, কারণ পদার্থবিজ্ঞানে এদের মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত সম্পর্ক রয়েছে। আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E = mc² দ্বারা আমরা জানি যে ভর এবং শক্তি পরস্পর বিনিমেয়। এই সূত্র অনুযায়ী, মহাবিশ্বের সমস্ত ভর এবং শক্তির যোগফলকে একত্রে বিবেচনা করা হয়।
মোট ভরের হিসাব
মহাবিশ্বের ভরের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন। বর্তমান অনুমান অনুসারে, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য ভর এবং শক্তি মিলিয়ে মহাবিশ্বের ভর-শক্তির ঘনত্ব প্রায় 1/10²⁹ gm/cm³ । তবে এটি পুরো মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ ও শক্তি সন্নিবেশ করে অনুমান করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ গবেষণা
মহাবিশ্বের ভর সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এখনও অসম্পূর্ণ। নতুন প্রযুক্তি, যেমন উন্নত টেলিস্কোপ, মহাকাশযান এবং কণা ত্বরক (particle accelerator), এই বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেবে। ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে আরও গভীর গবেষণার মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্বের ভর এবং এর প্রকৃতি সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারব।
মহাবিশ্বের ভর সম্পর্কে আলোচনা আমাদের অস্তিত্ব ও মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে আরও গভীর প্রশ্ন উত্থাপন করে। এই ভর কেবল মহাজাগতিক বস্তুগুলির অবস্থান বা গতিবিধি নির্ধারণেই নয়, বরং মহাবিশ্বের শুরু ও ভবিষ্যতের দিশা নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে এই বিশাল ধারণাকে আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করছেন। মহাবিশ্বের ভর নিয়ে গবেষণা চলমান, এবং এটি এক অনন্ত জ্ঞানের জগতে প্রবেশ করার মতো।
{fullWidth}
ক্যাটাগরি
মহাকাশ