বেশি ঝাল খাওয়া কি ভালো?
ঝাল খাওয়া দেহের জন্য ভালো কিনা তা নির্ভর করে ব্যক্তির স্বাস্থ্য, পরিমাণ এবং ঝালের ধরনের উপর। মসলাযুক্ত খাবার, বিশেষ করে যেগুলোতে মরিচ বা ক্যাপসাইসিন থাকে, তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কিছু উপকারী এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে ঝাল খাওয়ার সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
ঝাল খাবার মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যাপসাইসিন শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়, যা ক্যালোরি পোড়ানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ঝাল খাবার রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। মরিচ এবং অন্যান্য ঝাল মসলায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষের ক্ষতি রোধ করে। ক্যাপসাইসিন ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি ত্বকে প্রয়োগ করলে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস এবং স্নায়ুবিক ব্যথার ক্ষেত্রে। পরিমিত পরিমাণে ঝাল খাবার পাচনতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে। এটি পেটের অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়ায়, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। ঝাল খাবারে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ঝাল খাবার পেটে জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যাপসাইসিন যৌগটি খুব একটা সাধাসিদে রাসায়নিক নয়। এটা আমাদের মুখে থাকা পলিমোডাল স্নায়ুকে (Polymodal Nociceptor Nerves) উত্তেজিত করে তোলে। ব্যথা, তাপমাত্রা ও ঝাল শনাক্ত করাই এ স্নায়ুর কাজ। পাশাপাশি এটা আমাদের মস্তিষ্কে অনুভূতির তীব্রতা সম্পর্কেও তথ্য পাঠায়।(alert-warning)
এটি পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রাইটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ঝাল খাবার খাওয়ার পর অনেকেরই অন্ত্রে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষ করে যাদের সংবেদনশীল পাচনতন্ত্র রয়েছে। রাতে ঝাল খাবার খেলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে, কারণ এটি শরীরকে উত্তেজিত করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে। কিছু মানুষের ঝাল খাবারে অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা শ্বাসকষ্ট। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়া গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া হয়তো সাময়িকভাবে ডোপামিন নিঃসরণ করে আপনাকে আনন্দ দেবে, কিন্তু সেই আনন্দের জন্য নিজের বিপদের পথ খুলে দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যতটুকু ঝাল সহ্য করতে পারেন, ততটুকুই খান। কোনো কারণে হঠাৎ অতিরিক্ত ঝাল খেয়ে ফেললে জিহ্বা শান্ত করার জন্য দুধ খেতে পারেন। দুধে থাকে ক্যাসেইন (Casein) প্রোটিন। ক্যাপসাইসিনের (Capsaicin) প্রভাব নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে এটি।{alertSuccess}
ঝাল খাবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। যাদের পেটের সমস্যা বা সংবেদনশীল পাচনতন্ত্র রয়েছে, তাদের ঝাল খাবার এড়ানো বা সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি, এবং ঝাল খাবারকে সঠিকভাবে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
{fullWidth}