বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

সূর্য কেন সাগরে তলিয়ে যায় না?

© Mehrab360

সূর্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি বিশাল তারকা। এটি পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু এবং ধূমকেতুগুলিকে তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে ধরে রাখে। সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য শক্তি সরবরাহ করে। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, সূর্য কেন সাগরে তলিয়ে যায় না? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের মহাকাশ বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা এবং পৃথিবীর গঠন সম্পর্কে কিছু মৌলিক ধারণা বুঝতে হবে।



প্রথমেই বুঝতে হবে যে সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে বিশাল দূরত্ব রয়েছে। সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই দূরত্ব এতই বেশি যে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় নেয়। এই বিশাল দূরত্বের কারণে সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে কোনো শারীরিক সংযোগ নেই। সূর্য একটি তারকা, আর পৃথিবী একটি গ্রহ। সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে কোনো জলীয় মাধ্যম বা সাগর নেই যেখানে সূর্য তলিয়ে যেতে পারে। সূর্য একটি গ্যাসীয় বলয় যা প্রধানত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত। সূর্যের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে, যেখানে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি হিলিয়ামে পরিণত হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি নির্গত হয়। সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ১.৫ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের কারণে সূর্য একটি অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং জ্বলন্ত গ্যাসীয় বলয় হিসেবে বিদ্যমান।

পৃথিবী একটি শিলাময় গ্রহ যা প্রধানত ধাতব কেন্দ্র, ম্যান্টেল এবং ভূত্বক দ্বারা গঠিত। পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রায় ৭১% জল দ্বারা আচ্ছাদিত, যা আমরা সাগর, মহাসাগর, হ্রদ এবং নদী হিসেবে চিনি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রধানত নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাস দ্বারা গঠিত। পৃথিবীর পৃষ্ঠ এবং সূর্যের মধ্যে কোনো শারীরিক সংযোগ নেই, এবং পৃথিবীর সাগরগুলি সূর্যের কাছাকাছি নেই। সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে মহাকর্ষ বল কাজ করে। সূর্যের মহাকর্ষ বল পৃথিবীকে তার কক্ষপথে ধরে রাখে। একইভাবে, পৃথিবীর মহাকর্ষ বল আমাদের এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে ধরে রাখে। মহাকর্ষ বলের কারণে সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। সূর্য পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, কিন্তু পৃথিবীও সূর্যকে আকর্ষণ করে। এই পারস্পরিক আকর্ষণের কারণে সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে।

সূর্যাস্ত হল একটি দৃশ্যমান ঘটনা যা পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ঘটে। পৃথিবী তার অক্ষের চারদিকে ঘোরে, এবং এই ঘূর্ণনের কারণে আমরা দিন এবং রাতের পরিবর্তন দেখি। যখন পৃথিবীর একটি অংশ সূর্যের আলো থেকে দূরে সরে যায়, তখন সেই অংশে সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় সূর্য দিগন্তের নিচে চলে যায়, কিন্তু এটি আসলে সূর্যের গতি নয়, বরং পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলাফল। সূর্য এবং সাগরের মধ্যে কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। সূর্য একটি তারকা যা পৃথিবী থেকে কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর সাগর হল পৃথিবীর পৃষ্ঠের জলাধার। সূর্যের আলো এবং তাপ সাগরের পানিকে উত্তপ্ত করে, যা জলবায়ু এবং আবহাওয়া ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু সূর্য সাগরে তলিয়ে যায় না, কারণ সূর্য এবং সাগরের মধ্যে কোনো শারীরিক সংযোগ নেই।

সূর্য থেকে নির্গত আলো এবং তাপ পৃথিবীতে পৌঁছায় এবং আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য শক্তি সরবরাহ করে। সূর্যের আলো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের জন্য শক্তি সরবরাহ করে, যা খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি। সূর্যের তাপ পৃথিবীর জলবায়ু এবং আবহাওয়া ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্যের আলো এবং তাপ সাগরের পানিকে উত্তপ্ত করে, যা বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের চক্রকে সচল রাখে। সূর্য এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন। সূর্য বর্তমানে তার জীবনের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে, এবং এটি আরও প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর ধরে জ্বলতে থাকবে। এরপর সূর্য একটি লাল দানবে পরিণত হবে এবং শেষ পর্যন্ত একটি শ্বেত বামনে পরিণত হবে। এই প্রক্রিয়ায় সূর্য তার বাইরের স্তরগুলি হারাবে, এবং পৃথিবী সম্ভবত সূর্যের প্রসারিত বাইরের স্তর দ্বারা গ্রাস করা হবে। কিন্তু এই ঘটনা ঘটতে এখনও কোটি কোটি বছর বাকি রয়েছে।

সূর্য কেন সাগরে তলিয়ে যায় না এই প্রশ্নের উত্তর হল সূর্য এবং সাগরের মধ্যে কোনো শারীরিক সংযোগ নেই। সূর্য একটি তারকা যা পৃথিবী থেকে কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, আর সাগর হল পৃথিবীর পৃষ্ঠের জলাধার। সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে মহাকর্ষ বল কাজ করে, যা তাদের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখে। সূর্যাস্ত হল পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলাফল, এবং এটি সূর্যের গতি নয়। সূর্য আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য শক্তি সরবরাহ করে, এবং এটি আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তারকা।

{fullWidth}
© Mehrab360