বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

প্যারাসিটামল কিভাবে তৈরি হয়

© Mehrab360
প্যারাসিটামল হলো ইথানোয়িক অ্যানহাইড্রাইডের ফেনলিক এস্টার। এর রাসায়নিক নাম হলো N-(৪-হাইড্রক্সি ফিনাইল) ইথান্যামাইড। এটি জ্বর ও ব্যথা নিবারকরূপে কাজ করে (antipyretic & painkiller)। তবে প্যারাসিটামলের ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পিঠের ব্যথা, দাঁতের ব্যথা ও ঠাণ্ডা লাগাজনিত জ্বরে প্যারাসিটামল নির্দিষ্ট মাত্রায় বড়দের জন্য ট্যাবলেট ও শিশুদের জন্য সিরাপরূপে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের মাত্রার চেয়ে বেশি প্যারাসিটামল ওষুধ সেবনে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।

সংগৃহীত | www.istockphoto.com


প্যারাসিটামল সেবন মাত্রাঃ পূর্ণবয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রতিবার বা প্রতি ডোজে 1g বা 1000 mg অর্থাৎ 500 mg ট্যাবলেট ২টি এবং দিনে 4 g বা 4000 mg পর্যন্ত সেবন করতে পারে। দিনে 4 g পরিমাণের অধিক প্যারাসিটামল সেবনে কিডনি নষ্ট হতে পারে। কিন্তু অ্যালকোহল সেবনে অভ্যন্ত ব্যক্তিদের জন্য প্যারাসিটামলের অনুমোদিত মাত্রা হলো দিনে 2 g বা 2000 mg; চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তা সেবন করতে হবে।


ব্যথা উপশমে প্যারাসিটামল ও অ্যাসপিরিনের তুলনাঃ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) শিশুদের জ্বরে দেহের তাপমাত্রা 101.3°F (38.5° C) এর বেশি হলে প্যারাসিটামল ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ব্যথা-বেদনা উপশমে প্যারাসিটামলের কার্যক্ষমতা অ্যাসপিরিনের সমতুল্য। অধিক গ্যাস্ট্রিক এসিড (লঘু 0.1 M HCI) নিঃসরণে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ব্যথা-বেদনা উপশমে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ব্যবহার করা যায় না; বিশেষত পাকস্থলীর ক্ষত স্থানে রক্তক্ষরণ বৃদ্ধি করে। অস্থি-সন্ধির ব্যথা বেদনা প্যারাসিটামল কমাতে পারে; কিন্তু অস্থি-সন্ধির ফোলা বা প্রদাহ কমাতে পারে না।


প্যারাসিটামল প্রভৃতিঃ (Preparation of Paracetamol)

(১) পরীক্ষাগারে প্যারাসিটামল প্রস্তুতিতে প্রথমে ফেনলকে লঘু H2SO4 ও সোডিয়াম নাইট্রেট মিশ্রণ দ্বারা কক্ষতাপমাত্রায় নাইট্রেশন করলে অর্থো নাইট্রো ও প্যারা নাইট্রো ফেনল উৎপন্ন হয়। প্যারা নাইট্রোফেনলকে আংশিক কেলাসনে অর্থো-সমাণু থেকে পৃথক করার পর সোডিয়াম বোরোহাইড্রাইড (NaBH4) বা, H2(Ni) দ্বারা নাইট্রো মূলককে বিজারিত করে ৪-অ্যামিনো ফেনল এবং পরে এটিকে অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড (CH3CO)2O বা, Ac₂O] সহ অ্যাসিটাইলেশন করে প্যারাসিটামল প্রস্তুত করা হয়।

(২) হোসেস্ট-চেলনিজ (Hoechst-Celanese) ওষুধ কোম্পানির প্যারাসিটামল উৎপাদনে ফেনলকে সরাসরি HF এসিড প্রভাবকের উপস্থিতিতে অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড [ (Ac2O) বা, (CH3CO)2O] সহ অ্যাসিটাইলেশন করা হয়। পরে হাইড্রক্সিল অ্যামিন (NH2OH) সহ বিক্রিয়ায় কিটো মূলকটিকে কিটোঅক্সাইমে পরিণত করা হয়। পরে এসিড প্রভাবন বেকম্যান পুনর্বিন্যাস (Beckmann rearrangement) বিক্রিয়া দ্বারা অ্যামাইডে পরিণত করে প্যারাসিটামল উৎপন্ন করা হয়।


(৩) এছাড়া ৪-অ্যামিনো-ফেনলকে কক্ষতাপমাত্রায় ইথানোয়িক অ্যানহাইড্রাইডসহ অ্যাসিটাইলেশন করে প্যারাসিটামল প্রস্তুত করা যায়। এ পদ্ধতিতে তাত্ত্বিক পরিমাণের ৪৫% উৎপাদন মাত্রা হয়।

সূত্রঃ অধ্যাপক হারাধন নাগ, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী রসায়ন

Google News Logo গুগল নিউজে পড়ুন
{fullWidth}
© Mehrab360