১০০ বছরের রহস্যভেদঃ গণিতের জটিল কাকেয়া অনুমান সমাধান!
© Mehrab360
গণিতের জগতে বহু বছর ধরে কিছু সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (NYU) এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (UBC)-এর গণিতবিদরা এমনই একটি দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা, “কাকেয়া অনুমান” এর সমাধান করেছেন। এই গবেষণা গণিতের জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এবং এটি ২১শ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণিতিক আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
হারমোনিক অ্যানালিসিস নাম্বার থিওরি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ক্রিপ্টোগ্রাফি
{fullWidth}
© Mehrab360
![]() |
সংগৃহীত | phys.org |
কাকেয়া অনুমান মূলত জ্যামিতিক মাপের একটি সমস্যা যা ১৯১৭ সালে জাপানি গণিতবিদ সোইচি কাকেয়া উত্থাপন করেন। তার প্রশ্ন ছিল—সবচেয়ে ছোট এলাকাটি কতটুকু হতে পারে যেখানে একটি সুচকে ১৮০ ডিগ্রি ঘোরানো সম্ভব? এই ধরনের স্থানকে “কাকেয়া সুচ সেট” বলা হয়। গণিতবিদদের মূল আগ্রহ ছিল এটি বোঝা যে, একটি তিন-মাত্রিক স্থানে (3D Space) এমন ন্যূনতম এলাকা কতটা ছোট হতে পারে। যদিও তাত্ত্বিকভাবে এই এলাকা শূন্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এই এলাকা কখনই প্রকৃত অর্থে "খুব ছোট" হতে পারে না। অর্থাৎ, কাকেয়া সেটের ভলিউম (আয়তন) শূন্য হতে পারে, তবে তা অবশ্যই তিন-মাত্রিক স্থান দখল করবে।
NYU-এর গণিতবিদ হং ওয়াং এবং UBC-এর জোশুয়া জাল এর যৌথ গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে যে, কাকেয়া সেট কখনই সম্পূর্ণভাবে “ক্ষুদ্র” হতে পারে না। এই গবেষণায় তারা বিশেষভাবে টিউব বা সরু নলাকার গঠনের সংযোগ এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন। তারা “ইনডাকশন অন স্কেলস” নামে একটি শক্তিশালী পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যা এই সমস্যার একটি সাধারণ রূপ খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা কাকেয়া অনুমানকে আরও সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং তার সমাধান করেছেন। এই গবেষণার গুরুত্ব অনেক গভীর। এটি শুধু জ্যামিতিক পরিমাপ তত্ত্ব এর ক্ষেত্রে নয়, বরং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যেমনঃ
এই সমস্ত ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, কম্পিউটার বিজ্ঞানে তথ্য বিশ্লেষণ ও এনক্রিপশনের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বের ব্যবহার হতে পারে। এই গবেষণার প্রতি গণিতবিদদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছে। টেরেন্স টাও, যিনি ২০০৬ সালে গণিতের জন্য ফিল্ডস মেডেল জিতেছিলেন, তিনি একে “২১শ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতিক অর্জনগুলির একটি” বলে উল্লেখ করেছেন। আবার ইয়াল লুবেটস্কি, NYU-এর গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান, বলেন—"এটি সত্যিই একটি অসাধারণ কাজ।" এদিকে গুইডো ডি ফিলিপিস, Courant Institute-এর অধ্যাপক, এই আবিষ্কারকে "মহান গণিতিক কীর্তি" বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই আবিষ্কারের ফলে আমরা জ্যামিতিক গঠন এবং টিউবের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে গভীরতর বোঝাপড়া পাবো। এটি ভবিষ্যতে আরও বড় বড় গণিতিক সমস্যার সমাধান করতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা শুধুমাত্র কাকেয়া অনুমানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ফলে কম্পিউটার সায়েন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সহ বহু ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এই গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল টিউব স্ট্রাকচার বোঝা। অনেক জটিল গণিতিক সমস্যা সমাধানে ওয়েভ প্যাকেট বা তরঙ্গের ছোট ছোট অঞ্চলে বিভাজন করা হয়। এই তরঙ্গগুলি মূলত সরু নলাকার অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই টিউবগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝা গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এগুলোর মিথস্ক্রিয়া অনেক জটিল সমস্যার মূল সূত্র।
কাকেয়া অনুমান সমাধান করা গণিতের ইতিহাসে একটি বড় অর্জন। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সমস্যা বিজ্ঞানীদের বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। হং ওয়াং এবং জোশুয়া জালের এই যুগান্তকারী গবেষণা নতুন গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় আবিষ্কারের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই গবেষণার প্রভাব শুধু গণিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কম্পিউটার বিজ্ঞান, ক্রিপ্টোগ্রাফি, এবং তথ্য বিশ্লেষণেও ব্যাপকভাবে অনুভূত হবে। এটি সত্যিই এক যুগান্তকারী আবিষ্কার যা বিজ্ঞানের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ক্যাটাগরি
গণিত