গণিতের জাদুকরঃ শ্রীনিবাস রামানুজান
© Mehrab360
মেহরব৩৬০ চ্যানেল ফলো করুন
ফলো করুন
{fullWidth}
© Mehrab360
শ্রীনিবাস রামানুজান ছিলেন এক বিস্ময়কর গণিত প্রতিভা, যিনি বিনা আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় গণিতের গভীরতম রহস্য উন্মোচন করেছিলেন। ১৮৮৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের তামিলনাড়ুর ইরোড শহরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেওয়া রামানুজানের জীবন ছিল সংগ্রামময়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসাধারণ গণিত মেধার পরিচয় দেন। তবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় বিশেষ সুবিধা করতে না পারায় কলেজ জীবনে তিনি বারবার ব্যর্থ হন। গণিতে তাঁর দক্ষতা অতুলনীয় হলেও অন্যান্য বিষয়, বিশেষ করে ইংরেজি ও সাধারণ পাঠ্যক্রমে তিনি খাপ খাওয়াতে পারেননি। ফলে তিনি কলেজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি এবং তাঁর উচ্চশিক্ষা থমকে যায়।
কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও গণিতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অটুট। তিনি নিজ উদ্যোগে গণিতের গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। বিশেষ করে সংখ্যা তত্ত্ব, অসীম ধারা, অংশসমষ্টি এবং মডুলার ফাংশনের ক্ষেত্রে তিনি নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ শুরু করেন। কোনো রকম আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি অসংখ্য জটিল গাণিতিক সূত্র আবিষ্কার করেন, যা পরবর্তী সময়ে আধুনিক গণিতে বিপ্লব ঘটায়। তবে তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি তখনো মেলেনি। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে তিনি একটি নিম্নপদস্থ কেরানির চাকরি নেন, কিন্তু অবসর সময়ে গণিত চর্চা চালিয়ে যান। {inAds}
রামানুজানের জীবন বদলে যায় ১৯১৩ সালে, যখন তিনি বিখ্যাত ব্রিটিশ গণিতবিদ জি. এইচ. হার্ডিকে একটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিতে তিনি নিজের আবিষ্কৃত কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করেন, যা এতটাই চমকপ্রদ ছিল যে হার্ডি প্রথমে এগুলোকে ভুয়া বলে সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু গভীর বিশ্লেষণের পর তিনি বুঝতে পারেন যে রামানুজান সত্যিকারের গণিত প্রতিভা। হার্ডি তখন তাঁকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান, যেখানে রামানুজানের প্রতিভা বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়।
মেহরব৩৬০ চ্যানেল ফলো করুন
কেমব্রিজে থাকাকালীন রামানুজান অসংখ্য নতুন গাণিতিক তত্ত্ব ও সূত্র উদ্ভাবন করেন, যার মধ্যে "রামানুজান থিওরেম", "মক থিটা ফাংশন" এবং "সংখ্যা বিভাজন সূত্র" অন্যতম। তিনি π (পাই) এবং অসমাপ্ত ধারা (infinite series) নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন, যা আধুনিক গণিতের ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯১৮ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন, যা ছিল এক বিরল সম্মান।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর স্বাস্থ্য দ্রুত অবনতির দিকে যেতে থাকে। ভারতে দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হওয়া এবং ব্রিটেনের কঠিন জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নিতে না পারায় তিনি যক্ষ্মাসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হন। ১৯১৯ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন, কিন্তু তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা বেশ নাজুক। মাত্র ৩২ বছর বয়সে, ১৯২০ সালের ২৬ এপ্রিল, তিনি চিরবিদায় নেন।
অল্প সময়ের মধ্যেই অসংখ্য গাণিতিক আবিষ্কার করা রামানুজানের কাজ আজও গণিত জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুর পরও তাঁর নোটবুক থেকে অনেক নতুন সূত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তাঁর জীবন এক অনুপ্রেরণার গল্প, যেখানে প্রতিকূলতার মধ্যেও নিষ্ঠা ও মেধার মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের এক উজ্জ্বল উদাহরণ রয়েছে। আজও গণিত জগতে তাঁর অবদান অমূল্য এবং চিরস্মরণীয়।
{fullWidth}
ক্যাটাগরি
গণিত