বঙ্গাব্দ
© Mehrab360

বেশি ভ্রমণ করলে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে কেন মানুষ?

© Mehrab360

ভ্রমণ বা দীর্ঘ যাত্রা আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ কাজে, কেউ বেড়াতে, আবার কেউ জরুরি প্রয়োজনে দীর্ঘপথ পাড়ি দেন। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বেশি জার্নি করলে আমাদের শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তৃষ্ণা বেশি লাগে, আর ক্লান্তিও আসে। কেন এমন হয়? এর পেছনে রয়েছে বেশ কিছু বিজ্ঞানসম্মত কারণ, যা আজকের আলোচনার বিষয়।


{getToc} $title={বিষয়বস্তু সারণি} $count={Boolean} $expanded={Boolean}

আমাদের শরীরের ৬০-৭০% পানি দ্বারা গঠিত। যখন আমরা বেশি সময় ধরে ভ্রমণ করি, তখন শরীরের স্বাভাবিক পানির ভারসাম্য ব্যাহত হয়। দীর্ঘসময় বসে থাকা, গাড়ি বা বিমানের কন্ডিশনড পরিবেশ, ঘাম হওয়া ইত্যাদি কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়, ফলে আমরা দ্রুত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ি। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে পানি বেরিয়ে যাওয়া। ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে পানির ক্ষতি। শুষ্ক আবহাওয়া ও এয়ার কন্ডিশনের কারণে শরীরের আর্দ্রতা কমে যাওয়া।

বিমান, ট্রেন বা গাড়িতে ভ্রমণের সময় সাধারণত এয়ার কন্ডিশনিং (AC) ব্যবহার করা হয়। এটি বাতাসের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, ফলে আমাদের ত্বক ও শ্বাসযন্ত্র দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বিমানে বাতাসের আর্দ্রতা মাত্র ১০-২০% পর্যন্ত নেমে আসে, যা আমাদের শরীরকে পানিশূন্য করে দেয়। তাই ফ্লাইটে ভ্রমণের সময় আমরা তুলনামূলক বেশি তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ি। গরম আবহাওয়ায় দীর্ঘ ভ্রমণের সময় শরীর বেশি ঘামতে শুরু করে। ঘামের মাধ্যমে শুধু পানি নয়, শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ (ইলেকট্রোলাইট) যেমন সোডিয়াম ও পটাশিয়ামও বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে এবং তৃষ্ণার অনুভূতি আরও বাড়ে। বেশি সময় ধরে বসে থাকার ফলে শরীরের রক্তসঞ্চালন কিছুটা কমে যায়, যার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি না পেলে পানির চাহিদা বেড়ে যায়, যা তৃষ্ণা হিসেবে প্রকাশ পায়। অনেকেই ভ্রমণের সময় কফি বা কোমল পানীয় পান করেন। কিন্তু এসব পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন এবং চিনি শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করে এবং প্রস্রাবের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীর আরও বেশি পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

যদি পাহাড়ি এলাকায় বা বিমানে ভ্রমণ করা হয়, তাহলে উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাতাসে অক্সিজেন কমে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। ফলে শরীরের পানির চাহিদাও বেড়ে যায়, এবং আমরা বেশি তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ি। দীর্ঘ ভ্রমণের কারণে শরীরের ওপর মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়ে। স্ট্রেস হরমোন (করটিসল) বেড়ে গেলে শরীর পানির পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, ফলে তৃষ্ণা বেড়ে যায়। এছাড়া, ঘুম কম হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় এবং পানির চাহিদা বেড়ে যায়।

ভ্রমণের সময় তৃষ্ণার্ত হওয়া এড়াতে কিছু সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

সমাধান

পর্যাপ্ত পানি পান করুন, প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ২০০-২৫০ মিলিলিটার পানি পান করুন। ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, এগুলো পানির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। শরীর আর্দ্র রাখুন, লোশন বা মিস্ট স্প্রে ব্যবহার করুন, যাতে ত্বক শুষ্ক না হয়। তাজা ফল ও পানিযুক্ত খাবার খেতে হবে যাতে, শসা, তরমুজ, কমলা, আঙুর ইত্যাদি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। সামান্য নুনযুক্ত পানি বা ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক পান করুন, এতে শরীরের লবণের ভারসাম্য ঠিক থাকে। গাড়ি বা ট্রেনে ভ্রমণের সময় মাঝেমধ্যে হাঁটা-চলা করুন, যাতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়।{alertSuccess}

ভ্রমণের সময় শরীরের পানির চাহিদা বেড়ে যায়, যার পেছনে বেশ কিছু শারীরবৃত্তীয় কারণ রয়েছে। তবে কিছু সহজ উপায় মেনে চললে এই সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। তাই দীর্ঘ যাত্রার আগে ও যাত্রার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার চেষ্টা করুন, যাতে যাত্রা আরামদায়ক ও সুস্থির হয়।‌

{fullWidth}
© Mehrab360