চাঁদ কেন রাতে কিরণ দেয়?
চাঁদ আমাদের আকাশের সবচেয়ে সুন্দর ও রহস্যময় জ্যোতিষ্কগুলোর একটি। রাতের আকাশে এটি কখনো ছোট, কখনো বড় দেখায়, কখনো অর্ধেক, আবার কখনো পুরোপুরি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অনেকেই মনে করেন, চাঁদ নিজে থেকে আলো দেয়, কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। চাঁদের আলো আসলে সূর্যের আলোই, যা চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে পৌঁছায়। তাহলে চাঁদ কেন রাতে কিরণ দেয়? আসুন, বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি।
চাঁদের আলো কোথা থেকে আসে?
চাঁদ নিজে থেকে আলো উৎপন্ন করতে পারে না, কারণ এটি একটি মৃত গ্রহাণুর মতো পাথুরে বস্তু, যার কোনো জ্বলন্ত অংশ নেই। চাঁদ যখন সূর্যের আলো গ্রহণ করে, তখন সেটি তার পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয় এবং সেই আলো আমাদের চোখে পৌঁছায়। এই কারণেই আমরা চাঁদকে উজ্জ্বল দেখি। সূর্য থেকে যে পরিমাণ আলো চাঁদের ওপর পড়ে, সেটির পরিমাণ ও কোণ। চাঁদের উপরিভাগের উপাদানগুলো কেমনভাবে আলো প্রতিফলিত করে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল চাঁদের আলোকে কতটা স্পষ্টভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাতে দেয়। চাঁদ তার কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট কোণে অবস্থান নেয়। এই অবস্থান পরিবর্তনের ফলে আমরা চাঁদকে বিভিন্ন আকৃতিতে দেখতে পাই, যা চন্দ্র পর্যায় (Lunar Phases) নামে পরিচিত।
নতুন চাঁদের এই সময় চাঁদ পুরোপুরি অন্ধকার থাকে, কারণ এটি সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান নেয় এবং সূর্যের আলো চাঁদের সেই অংশে পড়ে, যা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। নতুন চাঁদের পর, ধীরে ধীরে চাঁদের একটি অংশ আলোকিত হতে শুরু করে, যা আমরা সরু বাঁকা চাঁদ হিসেবে দেখতে পাই। চাঁদের অর্ধেক অংশ তখন আলোতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কারণ এটি সূর্যের সঙ্গে এমন কোণে থাকে যে, আমরা চাঁদের অর্ধেকটা আলোকিত অবস্থায় দেখতে পারি। পূর্ণচন্দ্র (Full Moon) হলো সেই সময়, যখন চাঁদের সম্পূর্ণ অংশ সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে এবং রাতের আকাশে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। পূর্ণিমার পর চাঁদের উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, এবং চাঁদের আকার ছোট হতে শুরু করে। একে ক্ষয়িষ্ণু অর্ধচন্দ্র বলে।
আমরা চাঁদকে অনেক উজ্জ্বল মনে করি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাঁদের পৃষ্ঠ খুব বেশি প্রতিফলনশীল নয়। এটি মাত্র ১২% সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে পারে, যা তুষারের প্রতিফলন ক্ষমতার তুলনায় অনেক কম। তবে চাঁদ আমাদের রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু হওয়ায় এটি খুব বেশি আলোকিত মনে হয়।
✅ চাঁদের আলো আসলে খুবই ম্লান; যদি চাঁদ নিজের থেকে আলো তৈরি করতে পারত, তবে এটি সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল হতো।
✅ চাঁদের আলো আসতে পৃথিবীতে ১.৩ সেকেন্ড সময় লাগে।
✅ চাঁদের মাটিতে গঠিত ধুলো সূর্যের আলো প্রতিফলিত করতে সাহায্য করে।
✅ চাঁদের আলোতে ছায়া সাধারণত অনেক বেশি স্পষ্ট হয়, কারণ এটি সূর্যের আলো থেকে সরাসরি প্রতিফলিত হয়ে আসে।
✅ যদি চাঁদ একদম কালো রঙের হতো, তবে এটি রাতের আকাশে একেবারেই দেখা যেত না।
চাঁদ নিজে থেকে আলো দেয় না, বরং সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আমাদের কাছে পাঠায়। চাঁদের বিভিন্ন অবস্থানের কারণে আমরা কখনো একে পূর্ণিমা, কখনো অমাবস্যা, কখনো অর্ধচন্দ্র হিসেবে দেখতে পাই। চাঁদের আলো আমাদের রাতের আকাশকে স্নিগ্ধ ও সুন্দর করে তোলে, যা মানুষের মনে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে।
তাহলে চাঁদের আলো কি সত্যিই আলো?
না, এটি সূর্যের প্রতিফলিত আলো, যা পৃথিবীর রাতের আকাশে রহস্যময় সৌন্দর্য এনে দেয়।